পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপকভাবে উদযাপিত দুর্গাপূজা তার ঐশ্বর্যের জন্য পরিচিত। তবে, গ্রামীণ এলাকায় কিছু অনন্য রীতিনীতি রয়েছে যা কম পরিচিত। এই ঐতিহ্যগুলি এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক ঝলক উপস্থাপন করে।কুমারটুলি এবং শান্তিপুরের মতো গ্রামগুলিতে, শিল্পীরা প্রাচীন কৌশলে মূর্তি তৈরি করেন। এই মূর্তিগুলি স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা মাটি দিয়ে তৈরি, যা টেকসইতা নিশ্চিত করে। মাটি গড়ে তোলা থেকে মূর্তি আঁকা পর্যন্ত এই প্রক্রিয়াটিতে বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য রীতিনীতি হল ‘কুমারী পূজা’, যেখানে ছোট মেয়েদের দেবীর অবতার হিসেবে পূজা করা হয়। এই অনুশীলনটি সম্প্রদায়ের মহিলা শক্তি এবং বিশুদ্ধতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। এটি গ্রামবাসীদের মধ্যে ঐক্যের অনুভূতিও তৈরি করে।‘ধুনো পোড়া’ রীতিনীতিটিতে বিবাহিত মহিলারা জ্বলন্ত ধূপ দিয়ে নৃত্য পরিবেশন করেন। এই কাজটি পরিবেশকে শুদ্ধ করতে এবং দুষ্ট আত্মাদের দূরে রাখতে বলে মনে করা হয়। তালবদ্ধ আন্দোলন এবং জপ স্থানটিতে ভক্তি ও আধ্যাত্মিকতার পরিবেশ তৈরি করে।
গ্রামীণ এলাকায় দুর্গাপূজার সময় সঙ্গীত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ‘ঢাক’ এবং ‘খোল’ এর মতো ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য তাল দেয়। লোকগান দেবীর অশুভের উপর বিজয়ের কাহিনী বর্ণনা করে, গর্ব এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অনুভূতি তৈরি করে।খাবার এই উৎসবের আরেকটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। গ্রামবাসী ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন ‘খিচুড়ি’ এবং ‘লাবড়া’ তৈরি করে, যা দেবীকে উৎসর্গ করা হয় এবং পরে সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে ভাগ করা হয়। এই সাম্প্রতিক খাবার সামাজিক বন্ধনকে শক্তিশালী করে।
‘বিসর্জন’ নামে পরিচিত বিসর্জন অনুষ্ঠান দুর্গাপূজার শেষ চিহ্নিত করে। গ্রামীণ এলাকায়, এই ঘটনাটি কম বাণিজ্যিক কিন্তু তেমনই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামবাসী গান এবং নৃত্যের সাথে মূর্তিগুলি নিকটবর্তী নদী বা পুকুরে বহন করে।এই অজানা রীতিনীতিগুলি গ্রামীণ পশ্চিমবঙ্গের গভীরভাবে স্থাপিত ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে। তারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসা সাংস্কৃতিক অনুশীলন সংরক্ষণ করে, শহুরে উৎসবের বাইরে দুর্গাপূজার একটি অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে।